সুরুজ গাজী হত্যা মামলার আসামি স্বর্ণ প্রতারক চক্রের মূল হোতা শাহীন ওরফে শাবানা শাহিন জামিনে বের হয়ে তার পরিবারের সদস্য দিয়ে উল্টো ৩টি মামলা দিয়েছেন জেলা যুবদলের এক নেতা সহ স্থানীয় ২৬ জনের বিরুদ্ধে। মাত্র ৬ মাসের মাথায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আসামিদের জামিনের বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না নিহত সুরুজ গাজীর পরিবারের সদস্যরা।
সুরুজের ভাই শাহীন গাজী বলেন, তার ভাইকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ড্রিল মেশিন দিয়ে পেট ফুটো করে হত্যা করে শাহিন সহ তার তিন ছেলে। ঘটনার পর শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে র্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা আটক করে শাবানা শাহীনকে। একে একে আটক হয় তার অন্য তিন ছেলেও। কিন্তু কদিন আগে হঠাৎ শুনতে পান তারা হাইকোর্ট থেকে জামিনে বের হয়েছেন। একটি হত্যা মামলার আসামিরা সাজা না পেয়ে যদি জামিনে বের হয়ে যায় তবে মানুষ কিভাবে বিচার বিভাগের উপরে আস্থা রাখবে বলে প্রশ্ন করেন তিনি।
নিহত সুরুজের স্ত্রী জানান, ০৩।০৩। ২০২৫ ইং তারিখে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়। তাদের একটি ছোট বাচ্চা রয়েছে। একমাত্র উপার্জনকারী কে হারিয়ে তাদের অসহায় অবস্থা। তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার মতো কেউ নেই। হত্যাকারীদের কিভাবে জামিন দিল উচ্চ আদালত? টাকার কাছে যদি হাইকোর্ট ও বিক্রি হয়ে যায় মানুষ কার কাছে বিচার চাইবে বলে প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি দাবি করেন, জামিনে বের হয়ে হত্যা মামলার আসামিরা পাল্টা ঘরে আগুন দেয়ার অভিযোগ এনে ৩ টি মামলা করে সুরুজ হত্যার মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। সুরুজের স্ত্রী জানান, তার স্বামী সুরুজ গাজী তিন নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের নেতা ছিলেন। স্থানীয় সাধারণ মানুষ তাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার পর পর ক্ষুদ্র জনতা শাহিন ওরফে সাবানা শাহীনের ঘরে আগুন দেয়। শাবানা শাহিনের পুরো পরিবারটি একটি অপরাধ জগত। তারা সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। বিগত ২০ বছর যাবত তারা এই প্রতারণা করে আসে মানুষের সাথে। রিক্সাওয়ালাদের দিয়ে তারা এই প্রতারণা করে থাকেন। রিক্সার প্যাসেঞ্জারকে একটি চিঠি এবং ভুয়া সোনার গহনা ধরিয়ে দিয়ে লোভে ফেলে এই প্রতারণার ফাদ ফেলেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, শাহিনের একটি বিশাল সোনা প্রতারক চক্র রয়েছে। তারা রিকশাচালক সেজে এগুলো করে। শুরুতে রিক্সার যাত্রীকে একটি চিঠি এবং শোনার গহনা ধরিয়ে দিয়ে বলেন, স্যার এটি কুড়িয়ে পেয়েছি দেখেন কি লেখা আছে। চিঠিতে লেখা থাকে, "আমার টাকার খুব দরকার। চিঠির বাহক কে ৫০ হাজার টাকা দেও। এই গহনার দাম আরও অনেক বেশি আছে। পরে টাকা ফেরত দিয়ে গহনাটি আমি নিয়ে যাব " ইতি অমুক। চিঠি পড়ে রিক্সার যাত্রী লোভের মুখে রিক্সাওয়ালাকে কিছু টাকা দিয়ে গহনাটি নিয়ে চলে যায়। পরবর্তী যখন বুঝতে পারে এটি ভুয়া সোনা, রিক্সাওয়ালা ততক্ষণে স্থান ছেড়ে চলে যায়। এভাবেই ফাঁদ পেতে শাবানা শাহিনের পুরো পরিবার সারা বাংলাদেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করে। ফলে অনেক আগ থেকেই স্থানীয় মানুষ শাবানা শাহিনদের উপরে চরম ক্ষুব্ধ। তার উপরে আবার কাউকে হত্যা করায় বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি স্থানীয়রা। ফলে শাবানা শাহীন চক্রের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষুব্ধ জনতা তার বাসত ঘর জ্বালিয়ে দেয়। তার পরদিন অভিযান চালিয়ে র্যাব এবং পুলিশ গ্রেফতার করে তাদেরকে। কিন্তু মাত্র ৬ মাসের মাথায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে বের হয়ে উল্টো মামলা দেয় শাবানা শাহিনের পরিবার।ওই ঘটনায় আসামি করা হয় বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উলফাত রানা রুবেল সহ কয়েকজনকে। মামলাটি আদালত পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
এ দিকে মামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বরিশাল জেলা যুবদল।
২৪ সেপ্টেম্বর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ও বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এইচ. এম. তসলিম উদ্দিন এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন রেজা খান এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বরিশাল মহানগর ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুরুজ গাজীর হত্যাকাণ্ডের মামলা বর্তমানে বরিশাল বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন আদালতে বিচারাধীন। সেই মামলার ৪ নম্বর আসামি শ্রমিক লীগের সদস্য ইমরান হোসেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র করে যুবদল নেতা উলফাত রানা রুবেলকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে যুবদল নেতারা দ্রুত ষড়যন্ত্রকারী ইমরান হোসেনকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ বিষয়ে যুবদল নেতা উলফাত রানা রুবেল বলেন, “ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত বরিশাল মহানগর ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুরুজ গাজীর হত্যাকাণ্ডের সত্যকে ধামাচাপা দিতে এবং আমাদের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে এ ধরনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।” এমনকি তারা মামলা তুলে নিতে মীমাংসার প্রস্তাব দিচ্ছে আমাদেরকে।